খতিয়ান হচ্ছে দখলের প্রামাণ্য দলিল, মালিকানার দলিল নয়, খতিয়ানে মালিক ছাড়া অন্য কারো নাম অন্তরভুক্ত হয়ে গেলে যেমন সেই ব্যক্তির মালিকানা সৃস্টি হয় না তেমনি প্রকৃত মালিকের মালিকানা সত্বও নষ্ট হয় না শুধু মাত্র স্বত্বে কালিমা লিপ্ত হয়।
জরিপের খসড়া প্রকাশের পর কোন ভুল ধরা পরলে, রেভিনিউ অফিসারের নিকট ৩০ ধারায় আবেদন করতে হবে ।
উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট ৩১ ধারায় আপিল করে খুব সহজেই ভুলগুলো সংশোধন করে নেওয়া যায়।
কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি খতিয়ানের ভুলগুলো সংশোধন করা না হয় এবং চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশিত হয়ে যায়, তবে চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশিত হয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে সেটেলমেন্ট অফিসার রেকর্ড সংশোধন করতে পারে। যেমন উক্ত ভূলগুলো যদি হয় শুধুমাত্র করণিক ভূল, প্রিন্টিং-এ ভুল সেক্ষেত্রে এ ধরণের সামান্য ভূল অবশ্য সেটেলমেন্ট অফিসার সংশোধন করতে পারে। তবে অন্যান্য ভূলের সংশোধনের ক্ষমতা একমাত্র কোর্টের।
খতিয়ান সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে:
১. উক্ত জমিতে মালিকানার সকল দলিলপত্র (যেমন মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি, বায়া দলিল, পূর্বের খতিয়ানের কপি)
২. চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভূল রেকর্ডের কপি
৩. আইডি কার্ডের ফটোকপি
এ সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে একজন দক্ষ সিভিল ল”ইয়ার এর মাধ্যমে জমির খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে/ চূড়ান্ত খতিয়ানের
এ সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে একজন দক্ষ সিভিল ল”ইয়ার এর মাধ্যমে জমির খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে/ চূড়ান্ত খতিয়ানের প্রকাশের ১ বছরের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সংশোধনীর মামলা করতে হবে তবে এ মেয়াদ আরও ১ বছর বর্ধিত হতে পারে।
রায়ের বিরুদ্ধে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার্য।”মামলা করে।
উক্ত সময়ের মধ্যে মামলা করতে না পারলে ভুল সম্পর্কে জানার ৬ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে রেকর্ড ভুল ও অশুদ্ধ মর্মে ঘোষণা মূলক মোকদ্দমা
করতে হবে ।
জমির খতিয়ানের ভুল এই মর্মে আদালত ডিক্রি/ রায় দিলে সেই ডিক্রির সার্টিফাইড কপি নিয়ে খতিয়ান সংশোধনের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসারের কাছে আবেদন করতে হবে। সেটেলমেন্ট অফিসার সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলে পূর্বের ভূল রেকর্ডটি সংশোধন করে নতুন করে একটি রেকর্ড প্রকাশ করবে। উল্লেখ্য, ভূলক্রমে কোন ব্যক্তির জমি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে একই পদ্ধতিতে তা সংশোধন করতে হবে। ভূমি মন্ত্রনালয়ের ‘আইন শাখা-১’ এর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখের নং- ৩১.00.0000.082.67.032.১১.৮৪১ স্মারকে প্রচারিত ‘পরিপত্রে’ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড বা খতিয়ানের ভুল সংশোধনের জন্য ৩ ধরনের কর্তৃপক্ষের কথা বলা হয়েছে।
“১। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ৪৩ ধারা মতে, এবং প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৩) অনুযায়ী চুরান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করনিক ভুল (Clerical Mistake) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা (Revenue Officer) নিজেই সংশোধন করতে পারেন। বর্তমানে সার্কেল/উপজেলা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবেদনের প্রেক্ষিতে বা প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ২২ বিধির উপবিধি (১) অনুযায়ী খতিয়ানে দৃষ্ট করনিক ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং ২ নং রেজিস্টার পর্যালোচনা ক্রমে এবং তিনি যে ধরনের অনুসন্ধান প্রয়োজন মনে করেন, তা করে এরূপ করনিক ভুল সংশোধনের নির্দেশ দেবেন। কালেক্টর কর্তৃক বা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সংরক্ষিত খতিয়ান এবং ২ নম্বর রেজিস্টার অনুযায়ি সংশোধন করার নির্দেশ প্রদান করত সংশোধনলিপির কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রদান করবেন।
সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করনিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসুচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের ভুল, জরিপকালে পিতার মৃত্যুর কারনে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞাত কারনে তা মুল প্রজা বা পিতার নামে রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একইভাবে প্রতারনামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর উপবিধি (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।